ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুতে শোকের ঢেউ নেমে এসেছে রাজ্যজুড়ে। ধর্মীয় ও ভাষাগত বিভাজনের মধ্যে থাকা আসামে তার প্রয়াণ সৃষ্টি করেছে বিরল ঐক্যের পরিবেশ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে পারফর্ম করতে গিয়ে লাজারাস আইল্যান্ডের সমুদ্রসৈকতে ডুবে মারা যান ৫২ বছর বয়সী এ শিল্পী।
তার মৃত্যুর খবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পর্যন্ত শোক জানিয়েছেন। মোদি বলেন, ‘সংগীতে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার গান সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল।’ মুখ্যমন্ত্রী শর্মার ভাষায়, ‘আসাম তার প্রিয় সন্তানকে হারাল। তার কণ্ঠ মানুষের মনে ও প্রাণে শক্তি সঞ্চার করত।’ রাজ্য সরকার তার জুবিনের মৃত্যুতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।
২১ সেপ্টেম্বর জুবিনের মরদেহ আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে পৌঁছালে বিমানবন্দর থেকে হাজারো মানুষ মিছিল সহকারে তা নিয়ে যান শহরের স্টেডিয়ামে। সেখানে চার দিনব্যাপী সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। ভক্তরা মোমবাতি হাতে শোক প্রকাশ করেন এবং তার জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে তাকে স্মরণ করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২১ বার গুলিবর্ষণ করে তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
আসামে দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী অসমিয়া ও অভিবাসী বাঙালি ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের ‘অভিবাসী’ বা ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে হয়রানি, নাগরিকত্ব যাচাই ও ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর ঘটনা নতুন নয়। এমন উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে জুবিনের গান ছিল শান্তির বার্তা।
নিজেকে নাস্তিক ও সামাজিক বামপন্থী আখ্যা দেওয়া জুবিন কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেননি। তিনি প্রকাশ্যে বর্ণব্যবস্থার সমালোচনা করতেন এবং বহুবার বলেছিলেন, ‘আমি শুধু মানুষ, আমার কোনো জাত, কোনো ধর্ম, কোনো ঈশ্বর নেই।’
২০১৯ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। জাতিসংঘ যে আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছিল, সেটির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামনের সারিতেই দেখা গেছে তাকে।
শিল্পী হিসেবে জুবিন গার্গের জনপ্রিয়তা সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। তার মৃত্যুর পর শোক ও স্মৃতিচারণের ঢেউ শুধু আসাম নয়, পুরো ভারতজুড়েই মানুষের মনে একাত্মতার আবহ তৈরি করেছে।
আল জাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :