নগরীতে নিখোঁজের ১৬ দিন পর কিশোরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার


editor প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:২৭ অপরাহ্ণ /
নগরীতে নিখোঁজের ১৬ দিন পর কিশোরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে এক কিশোর চালককে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার ১৬ দিন পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর তালপুকুর মহল্লা থেকে গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় মূল অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা।

নিহত চালকের নাম মো. রেজওয়ান ইসলাম (১৬)। সে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরমারা মহল্লার লিলি হল মোড়ের বাবু ইসলামের ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন একই মহল্লার পাপ্পু (২২) ও তাঁর ভাই পিয়াস (২০), পবা উপজেলার হরিপুরের রাসেল (৪০), মানিক (২২) ও রিপন (২৪)।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেজওয়ানের বাবা বাবু পেশায় অটোরিকশাচালক। স্কুল বন্ধ থাকায় সে ২৩ মার্চ দুপুরে বাবার রিকশা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ওই দিন রাতে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, সন্ধ্যায় রেজওয়ানের সঙ্গে পাপ্পুকে ইফতার করতে দেখা গেছে। তাই সন্দেহের বশে পরদিন পাপ্পুকে ধরে পুলিশে দেওয়া হয়। একই দিনে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে অটোরিকশাটি পাওয়া গেলেও রেজওয়ানের কোনো সন্ধান মেলেনি।

এ ঘটনায় করা মামলায় গতকাল সোমবার পুলিশ পাপ্পুকে রিমান্ডে নেয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে একটি অব্যবহৃত ঘর থেকে রেজওয়ানের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রথমে রেজওয়ানকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। এরপর অচেতন অবস্থায় তালপুকুর এলাকার নির্মাণাধীন একটি ঘরে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

রেজওয়ানের বড় চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল ছুটি থাকলে ছেলেটা বাবার রিকশা নিয়ে ভাড়া মারতে যেত। তখন রোজার সময়, স্কুল ছুটি ছিল, ছেলেটাও রোজা ছিল। প্রতিবেশী পাপ্পু এসে তাকে কাঁকনহাট যাওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। বলে, ওখানে তার পাঁচটা ছাগল আছে, নিয়েই চলে আসবে। পবার দারুশা এলাকায় গিয়ে ইফতারের সময় হলে ছেলেটাকে নিয়ে সেখানে ইফতার করে। রাতে ছেলে ফিরে না এলে খুঁজতে খুঁজতে দারুশায় গেলে পরিচিত একজন জানান, ছেলেটার সঙ্গে পাপ্পুকে ইফতার করতে দেখেছেন। পরদিনই আমরা পাপ্পুকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। পরবর্তীতে বাকি আসামিগুলো আমরাই ধরে দিয়েছি। সোমবার পুলিশ পাপ্পুকে রিমান্ডে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার বিকেলে পাপ্পুর দেখানো ঘর থেকে ছেলের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ছেলের মুখ-চোখ ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। লাশ পচে গন্ধ বের হচ্ছে।’

লাশ উদ্ধারের পর আহাজারি করতে থাকা রেজওয়ানের মামাতো বোন বীথি বলেন, ‘আমার ভাই কারও কাছে কোনো দোষ করেনি, কখনো অন্যায় করেনি। আজ ১৬ দিন, আমার ভাইয়ের লাশ পচে গন্ধ বের হচ্ছে। আমার ভাইকে যে রকম নির্মমভাবে খুন করেছে, সেই রকমভাবে আমরা সব খুনির ফাঁসি চাই।’

এ বিষয়ে নগরীর দামকুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, “এই মামলায় মোট পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ মার্চ দিবাগত রাতে ছেলের বাবা অভিযোগ দেন। তাঁরা মূল আসামিকে (পাপ্পুকে) সঙ্গে করে নিয়েই থানায় অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। সে দিন স্বজনেরা যাকে ধরে এনেছিলেন, সেই লোকটাই ঘরটা দেখিয়ে দিয়েছেন। পরে পুলিশ ওই ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করেছে। আসামিরা মূলত অটোরিকশার ব্যাটারির (চুরির) জন্যই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আসামিরা একই এলাকার লোক। চিনে ফেলবে, তাই ব্যাটারি নেওয়ার পর তাকে (চালক) হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।”