ঈশ্বরদীর ইপিজেডে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫ শতাধিক শ্রমিক


editor প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২৫, ৮:০২ অপরাহ্ণ /
ঈশ্বরদীর ইপিজেডে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫ শতাধিক শ্রমিক

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া মহামারী রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেড এলাকায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক কয়েকজন শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে যান। পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার এবং শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়া জনিত রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে আসেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন। অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী ও পাবনাতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম গুরুতর অনেকেই বেসরকারি চিকিৎসকের নিকট হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়।

শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ পানির কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। তবুও পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

শনিবার (৩১ মে) দুপুরে সরেজমিনে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বেড সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা, করিডোর ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতালের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কম গুরুতর আরও অনেকেই আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে গত ২৯ মে ২৩১ জন এবং ৩১ মে দুপুর পর্যন্ত ৩৫৫ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

শ্রমিকরা পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডাক্তার ফয়সাল হাসান। তিনি বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় বছরে ২ বার এরকম ঘটনা ঘটে। এটা অস্বাভাবিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে ডাক্তার ফয়সাল হাসানের বক্তব্য সঠিক নয় জানিয়ে এ্যাবা কোম্পানির শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, দুই বছর ধরে ইপিজেডে কাজ করছি। এর আগে কখনও এত সংখ্যক শ্রমিকদের ডায়রিয়া বা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে দেখিনি।

নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মচারী বলেন, আমিও দুইবছর যাবত দায়িত্ব পালন করছি। এই সময়ের মধ্যে এভাবে আক্রান্ত হতে দেখিনি।

ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা অস্কার বাংলা কোম্পানির শ্যামলী বলেন, কোম্পানি চিকিৎসার কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যার যার ওষুধ ও স্যালাইন নিজেদের কিনতে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকলে হাফ বেতন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আলী এহসান। ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কেউ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীদের খোঁজ খবর নিতে আসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, সকালের দিকে মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার ফয়সাল ফোন দিয়েছিল। আর শুক্রবার একটি কোম্পানির লোক এসে খোঁজ-খবর করেছিল।

এ ধরণের ঘটনা বিব্রতকর উল্লেখ করে ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি. এর মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করে বিভিন্ন কারখানায় সাপ্লাই হয়। এসব সাপ্লাই পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার। প্রোডাকশনের কাজের জন্য। খাবারের জন্য কোম্পানির আলাদা ড্রিংকিং ওয়াটারের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকরা এই পানি পান করে। এ ব্যাপারে নিষেধ করা হলেও তারা শোনে না। এরপরও পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের সকল টেস্ট ও ট্রিটমেন্ট ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার থেকে করা হবে। আক্রান্তরা যথা নিয়মে মেডিকেল লিভ পাবে। এজন্য তাদের যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ইপিজেডে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি. পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। তারা পদ্মা নদী এবং ডিপ টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে ইপিজেড এলাকায় সাপ্লাই দেয়। এই কোম্পানি কারখানার বর্জ্যও ট্রিটমেন্টের পর আবার পদ্মা নদীতেই পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।