বাগমারা (হাটগাঙ্গোপাড়া) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় বিষাক্ত রাসায়নিক ড্যামফিক্স (পরিষ্কারক) পান করিয়ে স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে বারো ঘটিকার সময় মামলার দুই নং আসামি সেই পাষণ্ড স্বামীর বাবা রফিকুল (৬০) ইসলামকে এই মামলায় হত্যা চেষ্টার প্ররোচনা দানের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হাট গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই ডিএম জহিরুল ইসলাম তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ আসামীর নিজ গ্রাম চন্ডিপুর থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টায় তাকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২ নম্বর নরদাশ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মোঃ আমজাদ হোসেনের কন্যা আসমানী খাতুনের সাথে একই গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম এর ছেলে আঃ রশিদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বদমেজাজি পাষন্ড স্বামী আঃ রশিদের সাথে স্ত্রী আসমানী খাতুনের প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।
ঘটনার দিন (২২ দিন আগে) আঃ রশিদ তার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জোর পূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে তার মুখে ড্যামফিক্স এসিড জাতীয় তরল (পরিষ্কারক) ঢেলে দেয় আঃ রশিদ।
এসময় আসমানির ডাক চিৎকারে মেয়ের মা মালেকা বিবি এবং উক্ত মামলায় উল্লেখিত সরেজমিনে থাকা সাক্ষীগণ এবং আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কা জনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৮ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
টানা ১৭ দিন চিকিৎসার পর মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র দেয় আসমানীর চিকিৎসকরা। বর্তমানে আসমানির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সরেজমিনে আজ ২৬ এপ্রিল, শনিবার এই প্রতিবেদক গিয়ে দেখেন, নির্বিকার হয়ে বিছানায় শুয়ে থেকে গামলায় পা ভিজিয়ে কাতরাচ্ছে আসমানী। সারা শরীর জ্বালা পোড়া করছে তার, সেকারণে একটু স্বস্তি পাবার জন্য সারাক্ষণ ঠান্ডা পানিতে হাত-পা ভিজিয়ে রাখে সে। কিছু জিজ্ঞেস করলে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে গভীর কষ্টের নোনাজল। সাত বছরের একটা কন্যা সন্তানের কী হবে ? সেটি ভেবেও হয়তোবা মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছে না আসমানী। কথা হারিয়ে গেছে ড্যামফিক্স খাওয়ানোর পর থেকেই। যা কিছু চাই সব ইশারা ইঙ্গিতে।
জীবন প্রদীপ কখন নিভে যায় তার সেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে সে। বেশিরভাগ সময়ই স্যালাইন চলছে তার শরীরে, কিছুই গিলতে পারেনা। এমন নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তির আশায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আসমানির পিতা আমজাদ হোসেন গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫ মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে বাগমারা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ২৪/৯৬ । তারই প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন আঃ রশিদের বাবা রফিকুল ইসলাম।
ঘটনার পর থেকেই আসমানির স্বামী ও উক্ত মামলার এক নম্বর আসামি আঃ রশিদ পলাতক রয়েছে। উল্লেখ্য যে, চণ্ডীপুর গ্রামেই উভয়ের স্থায়ী নিবাস। কিন্তু বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজের সুবাদে রাজশাহীর শাহমখদুম থানার শিরোইল কলোনির ভাড়া বাসায় থাকতেন আসমানি। সেখানকার বাসাভাড়ার টাকা চাওয়ায় মূলত আসমানির কাল হয়ে দাঁড়ায়। এসময় আসমানীর ওপর ক্ষিপ্ত হন স্বামী আঃ রশিদ।
ঘটনার দিন সকাল ৯ টার দিকে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আসমানির কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চান আঃ রশিদ। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে আঃ রশিদ জোরপূর্বক আসমানিকে ‘ড্যামফিক্স’ নামক তরল রাসায়নিক (পরিস্কারক) বোতলে করে তার মুখে ঢেলে দেয়। সে মূলত আগে থেকেই নারিকেল তেলের বোতলে ভরে ওই রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিল।
আসমানির চিৎকার শুরু করলে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ে সে। পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় আসমানির গালের ডান পাশ ও জিহ্বায় কালো দাগ দেখা যায়। চিকিৎসক জানান, ‘রাসায়নিকের প্রভাবে এই মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াশ করার তো উপায় নেই। কারণ খাদ্যনালী পুড়ে গেছে তার। স্যালাইন চলছে শুধু। তার শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।’
এ ঘটনায় বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে, মামলার দুই নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলার বাদী আসমানীর পিতা আমজাদ হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়ে কিছুই খেতে পারছে না। কোনমতে ডাবের পানি এবং স্যালাইনের উপর বেঁচে আছে। আসমানির চিকিৎসকরা বলেছে, আমাদের আর কিছু করার নেই। যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে তাহলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে দেখতে পারেন।
এমতবস্থায় আসমানির পিতা আমজাদ হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, মেয়েকে তিলে তিলে এইভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখে ধৈর্য ধারণ করতে পারছি না। আমার সেই সামর্থ্যও নেই যে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। প্রতিবেশীরাও এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের যেন অতি দ্রুত কঠোর শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় সেই দাবিও জানিয়েছেন আসমানির পরিবারসহ তার প্রতিবেশীরা।
আপনার মতামত লিখুন :