গাজা অভিযানে ইসরাইলের লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি


editor প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২৫, ২:৩১ অপরাহ্ণ /
গাজা অভিযানে ইসরাইলের লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি

অনলাইন ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরুর আগে লক্ষাধিক রিজার্ভ সেনাকে তলব করতে শুরু করেছে ইসরাইল—শনিবার এমনটি জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। এ প্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারী কাতারের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

খবরে বলা হয়, নতুন করে তলব করা এই রিজার্ভ বাহিনীকে ইসরাইল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে মোতায়েনকৃত দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈন্য ও নিয়মিত সেনাদের বদলে গাজায় পাঠানো হবে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি। তবে এএফপি সাংবাদিকদের আত্মীয়দের কেউ কেউ এমন তলবনামা পেয়েছেন।

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা জানিয়েছে, রোববার এ বিষয়ে সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণ অনুমোদনের জন্য বৈঠকে বসছে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।

গত বছরের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধ জানুয়ারিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে স্থবির হয়ে পড়ে। তবে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তির পরও নতুন চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি থেমে আছে। এর মাঝে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও বড় পরিসরে অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল।

এরই মধ্যে শনিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে কাতারের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’ করার অভিযোগ এনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘তাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা সভ্যতার পক্ষে, না বর্বর হামাসের পক্ষে।’

চরম ডানপন্থীদের ওপর নির্ভর করে গঠিত জোট টিকিয়ে রাখার চাপে থাকা নেতানিয়াহু গাজা অভিযানে অব্যাহত সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘এই ন্যায়যুদ্ধে ইসরাইল জয়ী হবে, ন্যায়ের পথেই জয়ী হবে।’

‘বন্দী নং ২৪’

শনিবার হামাস এক ভিডিও প্রকাশ করে, যাতে গাজায় বন্দী একজন আহত ইসরাইলি-রুশ নাগরিককে দেখা যায়। অঞ্চলটির সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, ওইদিন গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।

হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ২,৩৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান যুদ্ধের মোট প্রাণহানি ৫২,৪৯৫।

হামাস এখনও ৫৮ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করে রেখেছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যেই নিহত বলে দাবি করছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এছাড়া ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধে নিহত এক ইসরাইলি সেনার মরদেহও হামাসের কাছে রয়েছে।

শনিবার হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডস যে ভিডিওটি প্রকাশ করে, তাতে যে ব্যক্তিকে দেখা যায়, তাকে রুশ-ইসরাইলি নাগরিক ম্যাক্সিম হারকিন হিসেবে শনাক্ত করে এএফপি ও ইসরাইলি সংবাদমাধ্য।

ভিডিওতে হারকিনের মাথা ও বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। হিব্রু ভাষায় কথা বলা ওই প্রায় চার মিনিটের ভিডিওতে তিনি নিজেকে ‘বন্দী নং ২৪’ নামে পরিচয় দেন এবং ইঙ্গিত করেন যে, সম্প্রতি এক ইসরাইলি বোমা হামলায় তিনি আহত হয়েছেন।

ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে হারকিনের পরিবার গণমাধ্যমকে এটি ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

হারকিনকে এর আগেও এপ্রিলের শুরুতে হামাস প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল। তখন তিনি আরও এক বন্দি ইসরায়েলি সেনা বার কুপারস্টেইনের পাশে ছিলেন।

‘আলো দেখার আকুতি’

একইদিন, শনিবার, হাজার হাজার ইসরাইলি তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন। তাদের দাবি, অবিলম্বে বন্দীদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করুক সরকার।

ইসরালি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজা অভিযানের লক্ষ্যই হলো বন্দীদের মুক্ত করা। তবে সমালোচকদের মতে, এই অভিযান উল্টো বন্দীদের জীবন আরও বিপদের মুখে ফেলছে।

‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যেকোনো সামরিক উত্তেজনা বন্দিদের জীবনকে তাৎক্ষণিক হুমকির মুখে ফেলবে।’

তারা আরও বলেছে, ‘ইসরাইলি জনগণের বৃহৎ অংশ মনে করে, বন্দীদের ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব।’

‘এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা বাকি আছে—যা দিয়ে জীবন রক্ষা করা এবং নতুন প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব।’

৬৪ বছর বয়সী আন্দোলনকারী অ্যারোনা মাসকিল এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি কারণ আমরা চাই বন্দীরা ঘরে ফিরে আসুক। আমরা এখানে এসেছি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি, গাজায় এখন যে যুদ্ধ চলছে, তার কোনো ন্যায্যতা নেই।’