তানোরে এনজিও’র খপ্পড়ে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে ঋণ নেয়া ৪ দরিদ্রের নামে ৩৪ লাখ টাকার চেকের মামলা


editor প্রকাশের সময় : জুন ১৭, ২০২৫, ৮:১৩ অপরাহ্ণ /
তানোরে এনজিও’র খপ্পড়ে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে ঋণ নেয়া ৪ দরিদ্রের নামে ৩৪ লাখ টাকার চেকের মামলা

সাইদ সাজু, তানোর : রাজশাহীর তানোরে দু’টি ভুয়া এনজিও’র খপ্পড়ে পড়ে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে ঋণ নিয়ে পরিষোধ করার পরও ৪ দরিদ্র নারী পুরুষের নামে আদালতে ৩৪ লাখ টাকা চেকের মামলা করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম নামের এক অসহায় মহিলা বাদি হয়ে সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও পলি বেগমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ ও এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগী সুত্রে জানা গেছে, তানোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও ২ নং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক কাউন্সিলর পলি বেগম পল্লী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ ও ফেমাস বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিঃ (এফবিডিএল) নামের দু’ টি ভুয়া এনজিও খুলে দরিদ্র শ্রেনীর অসহায় মানুষের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে উচ্চ সুদে দাদন (ঋণ) দিয়ে সর্বশান্ত করছেন। কেউ কিস্তি দিতে না পারলেই তার নামে আদালতে ১০ গুন টাকার অংক বসিয়ে মামলা ঠুকে দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম বরেন, আমি গত ১৭/০৮/২০২১ তারিখে রুপালী ব্যাংক তানোর শাখার হিসাব নং-১৪৭৪১, চেক নং-১৭১০৪৩৫ এর একটি ফাঁকা চেক জমা দিয়ে ৬৮,০০০/- (আটষট্টি হাজার) টাকা ঋণ গ্রহন করি। সাপ্তাহিক কিস্তুর মাধ্যমে গত ইং ২২/০৫/২০২২ তারিখের মধ্যেই সুদসহ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা পরিশোধ করি। টাকা পরিশোধের পরও আমাকে আমার চেক ও স্ট্যাম্প ফেরৎ না দিয়ে ওই চেক দিয়ে আদালতে আমার নামে ১১ লাখ ৩ হাজার ৭শ’ ৮০ টাকার মামলা দায়ের করেছেন।

অপর দিকে ফরিদা বেগমের ভাই সুখদেবপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ১ লাখ টাকা ঋণ দেন। টাকা পরিশোধ করার পরও একই কায়দার তার নামে ১৭ লাখ টাকার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শফিকুল ১৫ দিন জেলও খেটেছেন। কিন্তু অসহায় দরিদ্র ওই ব্যাক্তির টাকা দেয়ারমত কোন সম্পদ নেই। ওই টাকার জন্য দুই কাউন্সিলর ও তার লোকজন এখনো বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীকি হুমকিসহ লাঞ্চিত করছেন।

ফরিদা বেগমের মা একই এলাকার রাবিয়া বেগম নামের এক অসহায় দরিদ্র মহিলার কাছ থেকে ফাুকা চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে ১ লাখ টাকা রিং দেয়। ওই হমিলা সাপ্তাহে ৩ হাজার টাকা করে ৪৬ সাপ্তাহ দিয়েছেন। পরে তাকেও চেক ও স্ট্যাম্প ফেরৎ না দিয়ে তার নামে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার মামলা দায়ের করেছেন। ফরিদা বেগমের কন্যা তানিয়ার নামেও একই কায়দায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার চেকের মামলা দায়ের করেছেন নারী কাউন্সিলর পরি বেগম। ফরিদা বেগমসহ তার কন্যা, ভাই ও মায়ের নামে ৩৪ লাখ টাকার আদালতে চেকের মামলা দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও পলি বেগম বলেন, টাকা পাবো তাই মামলা করেছি জানিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। তারা বলেন মামলা থেকে বাচার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, এমন অভিযোগ করে কোন লাভ হবেনা বলেও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন তারা। তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিয়াকত সালমান বলেন অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমাজ সেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তানোর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে আপোষের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।