স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। অন্যদিকে মশকনিধনে নেই প্রশাসন, পৌরসভা কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম। এতে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন-অর-রশীদ বলেছেন, লোকবলসংকট ও আর্থিক সংকটে এডিস মশা ও লার্ভা নিধনের কাজ ঢিমেতালে চলছে। তবে শিগগির তাঁরা পুরোদমে কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আরামবাগ, বালুবাগান, পিটিআই, মাদ্রাসাপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া এলাকার অনেক বাসিন্দা জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে বহু রোগী শুয়ে আছে। মিলছে না হাসপাতালের শয্যা। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল পর্যন্ত ৬০০ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত ২৬ জন ভর্তি রয়েছে। আজ সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ১৭ জন।
জেলা শহরের বালুবাগান এলাকার বাসিন্দা বনানী খাতুন (২২)। ২৩ মে নিজে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হন। তিনি সুস্থ না হতেই তাঁর বোন (রজনী খাতুন) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তারপর তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাঁরও এক সপ্তাহ লাগে সুস্থ হতে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ে শিবতলা এলাকার ব্যবসায়ী মো. আয়েস উদ্দিন (৫৪) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক ডেঙ্গুর আক্রমণ বেড়েছে। ডেঙ্গু নিধনে পৌরসভার কোনো কার্যক্রম নেই। আমরা এতে হতাশ ও চিন্তিত। এখনই যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে।’
মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম মাখন (৪৫) বলেন, ‘ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা পৌরসভার তেমন কোনো কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি না। এতে ঈদের পর ডেঙ্গুর আক্রমণ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আমরা পৌরবাসী ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত। তা ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষা করার জন্য কিট নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকের ডেঙ্গু না থাকা সত্ত্বেও পজিটিভ হচ্ছে বলে সন্দেহ করছি।’
ডেঙ্গুর পুরুষ ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা. রেহেনা খাতুন জানান, প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মাত্র পাঁচজন নার্স নিয়ে প্রায় ৭০ জন রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। এতে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে তাঁরা কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। তবে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ পারভেজ জানান, ‘জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে পিটিআই, আরামবাগ, বালুবাগান—এসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল রোগীদের রাজশাহীতে রেফার্ড করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ-সরঞ্জাম আছে। ভবিষ্যতে রোগী আরও বাড়লে চিকিৎসা দিতে কিছুটা সমস্যা হবে। তাই এখনই উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। সে জন্য প্রশাসন ও পৌরসভার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি।’
এদিকে ডেঙ্গু মশার নিধনে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ও লার্ভা নষ্টে ড্রেনে বিষ দেওয়ার কার্যক্রম চালু আছে জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন-অর-রশীদ জানান, ডেঙ্গু মশা নিধনে লোকবলসংকটে চারজন দক্ষ লোক দিয়ে ঢিমেতালে কাজ চলছে। তবে সেটা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধোঁয়া স্প্রে ও লার্ভা নষ্টে কার্যক্রম বাড়ানো যায় কি না, সেটা নিয়ে ভাবছি। আর মসজিদে মসজিদে নোটিশ দেওয়া হবে যেন শুক্রবার মুসল্লিদের নোটিশের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। সচেতনতাই পারে আমাদের ডেঙ্গুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে।
আপনার মতামত লিখুন :