আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের চাকুরি রক্ষা ও নি‌য়োগ বা‌নি‌জ্যে সোচ্চার সাবেক ছাত্রদল নামধারী একটি চক্র


editor প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ণ /
আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের চাকুরি রক্ষা ও নি‌য়োগ বা‌নি‌জ্যে সোচ্চার সাবেক ছাত্রদল নামধারী একটি চক্র

দুমকি ও পবিপ্রবি (পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (পবিপ্রবি) অস্থিতিশীল ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের চাকুরি রক্ষা ও‌ নি‌য়োগ বা‌নি‌জ্যে মাঠে নেমেছে সাবেক ছাত্রদলের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে শামসুল হুদা রিফাত নামের একজন চাকুরি প্রত্যাশীর দায়েরকৃত রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনু সহ ৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই মর্মে গত ১৮ মার্চ দৈনিক কালের কন্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে পবিপ্রবিতে সাবেক উপাচার্যের ছেলেসহ ৬ কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুত শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের চাকুরি রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামীলীগের সকল সুবিধাভূগী ছাত্রদল নামধারী আব্দুল্লাহ আল বাক্কী, পবিপ্রবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাসেল মিয়া ও তাদের কয়েক অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত ৭ আগস্ট আবদুল্লাহ আল বাক্কীর ঘনিষ্ট সহযোগী শাহিন আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পবিপ্রবিয়ান নামের একটি ফেইসবুক পেইজে পবিপ্রবিতে কর্মরত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের চাকুরি রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়ে মর্মে পোস্ট দিয়েছেন বলে সত্যতা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, পবিপ্রবির বর্তমান প্রশাসন ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগষ্ট, ২০২৪ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট আমলের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে একটি কমিশন গঠন করায় দুর্নীতিবাজরা চাকুরি হারানোর আতংকে ভুগছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তথাকথিত ছাত্রদল নামধারী আবদুল্লাহ আল বাক্কী, রাসেল মিয়া ও তার কয়েক অনুসারী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ব্যবহার করে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চাকুরি ফেরত দেয়ার কথা বলে নিয়মিত আশ্বাস দিচ্ছেন এবং চাকুরি ফেরত দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গে‌ছে। রা‌সেল মিয়া ও আব্দুল্লাহ আল বাক্কী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে কর্তৃপক্ষকে চাপে রেখে বরখাস্তকৃতদের পুর্নবহালের চেষ্টার পাশাপাশি চলমান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকেও টার্গেট করে চাকু‌রি প্রত‌্যাশীদের চাকুরি দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাসেল মিয়া, আবদুল্লাহ আল বাক্কী ও তা‌দের অনুসারী ক‌য়েকজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন ও কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিমের রেফারেন্স দিয়ে ২১ জনের একটি তালিকা পবিপ্রবির কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে চাকুরির ব্যবস্থা করার আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু প‌বিপ্রবি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিম ও হাসান মামুনের সুপারিশে ৭ জনকে দৈ‌নিক হা‌জিরা ভি‌ত্তি‌তে খন্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সু‌যোগ দেয়ার আশ্বাস প্রদান ক‌রেন । এ‌তে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কমপ‌ক্ষে ২১ জনের চাকুরী দেয়া না হলে চলমান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ করে দেয়ার হুম‌কি‌দেন।

৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে এবং সকল কার্যক্রমকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য গত ২৭ জানুয়ারী জরুরী ভিত্তিতে ৩ জন শিক্ষক ও ৬ জন অফিসারকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে খন্ডকালীনভাবে নিয়োগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সা‌বেক ছাত্রদল নামধারী নেতারা উক্ত নিয়োগ বাতিলের জন্য গত ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে দরখাস্ত করেন।

গত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় বিশেষ করে শেষ ৯ বছরে পবিপ্রবিতে এরা শতবার আসলেও তখন তারা ছাত্র দলের কোন পরিচয় দেননি। তখন তারা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দীন নাসিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আফজাল হোসেন এর সাথে নিয়োগ বানিজ্য ও দালালির ভাগ বাটোয়ারা করত। তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে দালালি, নিয়োগ বানিজ্য ও চাঁদাবাজে লিপ্ত ছিল।
এ চক্রের সাথে গত সরকারের সময় বেশ কয়েকবার নিয়োগ বানিজ্য ও টেন্ডার বানিজ্যের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ডিপুটি রেজিস্ট্রার নঈম কাওসার, সাইদুর রহমান জুয়েল, হুমায়ুন কবির আমিন, আরিফ আহমেদ জুয়েল, কামরুল ইসলাম এবং মাস্টার রোল শ্রমিক শামসুল হক রাসেল এর সাথে হাতা হাতির মত ঘটনা ঘটে। অনেকসময় সাবেক ভিসি হারুন ও স্বদেশ তাদের ভাগ বাটোয়ারা কম-বেশি দিয়ে সমাধান করেন, যা ড. হারুন নিজে এখনও বলেন ।

ছাত্রদলের কোন পূর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় ছাত্রদলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় পেীছানোর কারণে ফ্যাসিস্ট আমলে আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল তেমন কোন দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে পারেনি। অবশেষে জাহিদুল ইসলাম রাতুলকে সভাপতি ও সোহেল রানা জনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪ মার্চ ২০২৫ সালে পবিপ্রবিতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়া হয়। এছাড়াও মিয়া রাসেল ফ্যাসিস্ট হাসিনার পূত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সামি আহমেদের স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত এবং সা‌বেক আই‌সি‌টি প্রতিমন্ত্রী জুনা‌ইড আহ‌মেদ পল‌কের ঘ‌নিষ্ঠজন হি‌সে‌বে প‌রি‌চিত। তার স্ত্রী ফাহিমা বিনতে আখতার প্রশাসন ক্যাডারে কুমিল্লায় কর্মরত থাকাকালীন ২০২২ সালে “বঙ্গ বন্ধু জনপ্রশাসন পদক” পেয়েছেন। সর্বশেষ টাংগাইল ভুয়াপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনার ২০২৪ এর অবৈধ নির্বাচনে তার স্ত্রী সহায়তা করেন। স্ত্রী প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত থাকার সুবাধে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে তিনি ব্যাপক তদবির বানিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, আবদুল্লাহ আল বাক্কী পবিপ্রবির শুধুমাত্র সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ২০১৭ সালে ২৬ মে কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশনে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাবেক দুর্নীতি পরায়ন ভিসি হারু।