মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : আমতলী পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকং এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে পরায় সর্বত্র ডাকাত আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা নির্ঘমুত রাত জেগে লাঠি সোঠা এবং দা বটি নিয়ে পাহারা দিয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার সময় পৌরসভার লঞ্চঘাট এলাকায় ঈদ উপলক্ষে সাগর থেকে বাড়ী ফেরা একটি জেলে ট্রলালের উপর ডাকাত ভেবে হামলার চেষ্টারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অল্পের জন্য ৯জন জেলে মৃত্যুও হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান বলেও জেলেরা জানান। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বলছে বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১১টার পর্যন্ত আমতলী পৌরসভার পায়রা নদী তীরবর্তী লোছা, নয়াভাঙ্গুলী, বাসুগী ও সবুজবাগ লঞ্চঘাট এলাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিষ এলাকা, গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী,কাউনিয়া, হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তরতক্তাবুনিয়া গ্রামে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উক্ত এলাকা গুলোর মসজিদ থেকে মাইকিং করে এলাকা বাসীকে সতর্ক করে ডাকাতদের প্রতিহত করতে পাহারা বসানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। এভাবে মাইকিং শুনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রামে ডাকাত প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পরায় ডাকাত আতঙ্কে নারী পুরুষ সবাই লাঠি সোঠা দা বটি নিয়ে রাত জেগে পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়ে নিঘুর্ম রাত কাটিয়েছে।
আমতলী পৌরসভার পায়রা নদী তীরবর্তী লোছা, নয়াভাঙ্গুলী, বাসুগী, সবুজবাগ লঞ্চঘাট, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সংলগ্ন এলাকার মসজিদ থেকে ট্রলার যোগে ডাকাত আসার খবর প্রচার করে সকলকে পাহারা বসানোর আহবান জানায়। এ সময় সাগর থেকে ঈদ উপলক্ষে সবুজবাগ লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা রনি খা নামে এক ট্রলার মালিক মা বাবার দোয়া ট্রলার নিয়ে ৯ জন জেলেসহ ঘাটে আসার সময় ফেরিঘাট এলাকায় আলামিন নামে এক খেয়া চালকের নেতৃত্বে তাদের উপর অন্য আরেকটি ট্রলার নিয়ে ডাকাত ভেবে হামলার চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে জেলেদেও স্বজনরা দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছলে প্রানে বেঁচে যান তারা।
জেলে ট্রলারের মালিক রনি খা অভিযোগ করে বলেন, ১৬ মার্চ মাছ ধরার জন্য আমরা ৯ জন জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার সময় আমরা বাড়ি আসার জন্য রওয়ানা হই। পথে বসেই আমরা এলাকায় ডাকাত আতঙ্কের খবর পেয়ে আমাদের ট্রলারের সকল আলো জ্বালিয়ে দিয়ে আমরা ট্রলারের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম যাতে সবাই আমাদের চিনতে পারে আমরা ডাকাত নয় জেলে। তারপরও আলমিন নামে এক খেয়ার মাঝির নেতত্বে একটি ট্রলার নিয়ে উত্তেজিত জনতা আমাদের ডাকাত ভেবে হামলার চেষ্টা করে। স্বজনরা এসে পরায় আমরা অল্পের জন্য মৃত্যুও হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাই। তিনি আরো বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ইউএনও স্যারে এসে আমাদের সকলকে এটি গুজব বলে বোঝানোর পর সব মানুষ শান্ত হয়।
কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের জুয়েল মৃধা বলেন, রাত ১০ টার পর থেকে এলাকার মসজিদগুলোর মাইকে গ্রামে ডাকাত ঢুকছে মর্মে সর্তকতা অবলম্ভন করে পাহারা দিতে এলাকাবাসীকে অনুরোধ করা হয়। তাই আমরা গ্রামবাসীরা মিলে পাহারা দিতে টর্চ হাতে রাস্তায় নেমে এসেছি।
আমতলী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসরাত শাহ আল-আমিন পিকু ও ফারুক মিয়া বলেন, রাত সাড়ে ১১টার পর পৌরসভাসহ আমতলী উপজেলার সর্বত্র ডাকাত আতংকে মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। এ কারনে আমরা এলাকাবাসী সারা রাত ঘুমাতে পারি নাই। সবাই রাত জেগে লাঠি সোঠা নিয়ে পাহারা দিয়েছে।
গুলিশাখালী গ্রামের চান মিয়া নামের একজন বলেন, পায়রা নদীতে ট্রলারে ডাকাত আসছে খবর পেয়ে গ্রামবাসী সবাই আতঙ্কিত হয়ে পরি। এসময় আমরা রাত জেগে সাবাই পাহারা দিয়েছি।
হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের শাহীন হাওলাদার বলেন, রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে গ্রামে ডাকাত ঢুকছে মর্মে মসজিদের মাইকিং শুনতে পেয়েছি। রাতভর রাস্তায় রাস্তায় এলাকার মানুষজন মিলে আমরা পাহারা দিয়েছি।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, একটি মহল উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে মিথ্যা ডাকাত পড়ার তথ্য ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করছে। যারা এভাবে গুজব ছড়িয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এজন্য আমিসহ মাঠে একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে এবং সর্বত্র নজর দারি বাড়ানো হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত পরার বিষটি আসলে গুজব। সবাইকে এ বিষয়ে তিনি সতর্ক থাকার আহবান জানান এবং সবুজবাগ লঞ্চঘাট এলাকায় ডাকাত ভেবে জেলেদেও উপর হামলার চেষ্টার খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। মুল ঘটনা ছিল সবুজবাগ লঞ্চঘাট এলাকার একটি মাছ ধরা ট্রলার ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরছিল। ট্রলারটিতে ৯ জন জেলে ছিল। বিষয়টি যে গুজব এ নিয়ে সকলকে বুঝানোর পর তারা সবাই বাসায় ফিরে যান।তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত পরার মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরাধীদেও বের করার পর তাদেও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :