পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ২২ সদস্যের কমিটির ১১ জনই ছাত্রলীগের এমন বিতর্কের মুখে ওই কমিটি স্থগিত করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদ। এর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থগিত কমিটির নেতা-কর্মীরা।
এ সময় তাঁদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থগিত কমিটির সভাপতি সাগর মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সারজিস আলম একসময় ছাত্রলীগ করেছেন। ছাত্র আন্দোলনে অবদান বিবেচনায় এখন তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি করছেন। তাহলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না?’ বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেন তিনি।
সাগর মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় লিমন, নাহিদ, শাকিলসহ ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার তৎকালীন নেতাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধাকে ইচ্ছার বাইরে ছাত্রলীগের হল কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে। দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ না নিলে ও কার্যক্রমে না থাকতে চাইলে পরীক্ষায় ফেল করানো ও ছাত্রত্ব বাতিলের ভয় দেখানো হয়েছে।’
ফলে চাপের মুখে নামকাওয়াস্তে তাদের কার্যক্রমকে সম্মতি দিতে হয়েছে। তবে কোনো অন্যায় কাজে তাদের কেউ কখনো অংশ নেয়নি। উল্টো একটু একটু করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, হলে অনিয়ম ও র্যাগিংয়ের মতো নানা বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেছে। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে এসব নেতা-কর্মীরা সম্মুখ সারিতে থেকে ভূমিকা নিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের মারধর ও অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখানো হয়েছিল।
এগুলোর সমস্ত প্রমাণ আছে। আন্দোলনের আগেই ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার বিষয়টি পরিষ্কারও করেছেন তাঁরা। যা তাঁদের ফেসবুক পোস্ট যাচাই করলে বোঝা যাবে। এ ছাড়া এ নিয়ে সংবাদকর্মীদেরও অবহিত করা হয়েছিল।
সাগর মাহমুদ বলেন, ‘পাবনা মেডিকেল কলেজ অল্প শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতারা কলেজের অধিকাংশ ছাত্রকেই তাদের কমিটিতে নাম দিয়ে রাখত। অথচ গুটিকয়েক ছাড়া অধিকাংশই এ সংগঠনের সঙ্গে থাকায় অনীহা ছিল। কিন্তু ভয়ে কমিটিতে নাম দেওয়ায় প্রতিবাদ করতে পারেনি। আমাদের যেসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মী বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, তারাও একই ধরনের ভুক্তভোগী। এ ক্ষেত্রে এখন এদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে কলঙ্কিত করা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার সুস্থ ধারার রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখাটি অন্যায় ও অমানবিক।’
এসব নেতা-কর্মী অনলাইন মবোক্রেসির শিকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী চেতনাকে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন কাজ করছে। আমাদের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে।’ এ সময় গুপ্ত সংগঠনগুলোর ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতিকে রুখে দিতে স্থগিত কমিটি পুনর্বহালের দাবি জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শুভ, সিনিয়র সহসভাপতি আমিমুল এহসান তনিম, তানিয়া তাজনীন, মান্নান মণ্ডল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শেখ আল ফাইয়াদ, তাশরিফ আলম, স্বাধীন হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাবিল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির পাবনা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ২২ সদস্যে কমিটির অনুমোদন দেন।
কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ পদেই ছাত্রলীগের ১১ জন নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর ২৪ মার্চ ওই কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় সংসদ।
আপনার মতামত লিখুন :