সুমাইয়া সুলতানা হ্যাপি (ঈশ্বরদী-পাবনা): পাবনার ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ বন্ধুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শুক্রবার বাদ জুমা ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর ও ভারইমারি গ্রামে জানাজা শেষে তাঁদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরদী হাইওয়ে থানা থেকে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
মরদেহগুলো নিয়ে বাড়িতে পৌঁছার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেন প্রতিবেশীরা। একসঙ্গে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা।
এদিকে, নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। আজ শুক্রবার সকালে নিহতদের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর ও ভারইমারি গ্রামে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস ও দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বকুল সরদার। এ সময় তাঁরা নিহতদের স্বজনদের গভীর সমবেদনা জানান এবং তাঁদের পাশে থাকতে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক। কারোরই কাম্য নয়। নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা পাশে থাকব।’ তবে পরিবার থেকে সন্তানদের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঈশ্বরদী ইউএনও সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে আছি। সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে।’ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গাড়ির চালকদের আরও সাবধান ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিজয়ের নানি হাসিনা বেগম বলেন, ‘বিজয় ঢাকায় গাড়ি চালায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে আসছে মালিকের প্রাইভেট কার নিয়ে। এ সময় সে তার স্ত্রীকে বলেছিল, ‘‘আমার সময় বুঝি বেশি নাই, তুমি কি একা থাকতে পারবে। আমি তো মনে হয় আর ফিরব না তোমার কাছে। আজ বাড়িতে আসছি, বাড়িতেই থাকব কোথাও যাব না।” কিন্তু তার অন্য বন্ধুরা এসে তাকে বারবার বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। বন্ধুদের অনুরোধ রাখতে সন্ধ্যার পরে প্রাইভেট কার নিয়ে বেড়াতে বের হয় বিজয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট কার নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া চিনিকলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় মারা যান পাঁচ বন্ধু। এ ঘটনায় আহত দুজন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন ঈশ্বরদী উপজেলার আজমপুর গ্রামের কবির ওরফে আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাইক্রোবাসচালক বিজয় (২৩), রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ (১৬), ইলিয়াস আলীর ছেলে শিশির (১৫), মৃত মাসুম হোসেনের ছেলে সিফাত (১৫) ও ভাড়ইমারি গ্রামের ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন (১৫)।
আহত দুজন হলেন জাপান আলীর ছেলে শাহেদ ওরফে জেটু (১৬) ও সুমন হোসেনের ছেলে নাইম (১৭)।
নিহতদের মধ্যে প্রাইভেট কারচালক বিজয় ঢাকায় গাড়ি চালান। আর বাকি চারজন স্থানীয় একটি ভকেশনাল ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ মাস আগে একই ইউনিয়নের তিন বন্ধু বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সেই দুর্ঘটনার দাগ মুছতে না মুছতেই এবার প্রাণ হারাল পাঁচ বন্ধু।
আপনার মতামত লিখুন :