রাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা শিক্ষক সমিতির


editor প্রকাশের সময় : জুন ৩০, ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ /
রাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা শিক্ষক সমিতির

রাবি প্রতিনিধি: সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। দাবিগুলো মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
প্রত্যয় স্কিমকে ‘শুভংকরের ফাঁকি’ উল্লেখ করে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটা বাহারি নাম দিয়ে গত ১৩ মার্চ যে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আমি সেটাকে শুভংকরের ফাঁকি বলে মনে করি। কারণ এই স্কিমের ফলে আমরা যা টাকা দিব, একসময় সেই টাকাই ফেরত দেওয়া হবে সর্বজনীন পেনশনের নামে। আমরা আজ এখানে আমাদের জন্য অবস্থান নিইনি। আজ থেকে ২৬ দিন পর আমাদের সহকর্মী হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পাবেন, তাঁদের রক্ষার জন্য, দেশ ও সমাজকে রক্ষা করার জন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের চেতনা থেকে আমাদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা সেই স্বায়ত্তশাসনের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অসম্মানের সমান।’
প্রত্যয় স্কিম বাতিল না করলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না এমন শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, ‘এটা সরকার বা আওয়ামী লীগের বিষয় না, এটা শিক্ষকদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণা করার সময় বলেছেন, যাঁদের পেনশন নেই তাঁদের জন্য। উন্নয়নের অংশ হিসেবে তিনি এটা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তো আগে থেকেই পেনশনের আওতায় রয়েছি। হঠাৎ আবার কেন আমাদেরও এর আওতায় আনা হলো? আমাদের বিরুদ্ধে এটা একটা ষড়যন্ত্র। এই স্কিম বাতিল না করলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতে চাইবে না। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
কর্মসূচিতে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার থেকে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষাসহ একাডেমিক সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এখানে আমরা একরকম বৈষম্যের শিকার। আজ কোনো শিক্ষক যদি চাকরিতে নিয়োগ পান, তবে তিনি প্রত্যয় স্কিমের আওতার বাইরে থাকবেন। আবার আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) থেকে যদি কাজে যোগদান করেন, তবে তিনি এই স্কিমের আওতায় আসবেন। চাকরি শেষে দেওয়ার জন্য আপনার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হবে। এটা কিন্তু প্রশাসনের কোনো বাহিনীর জন্য করা হয়নি। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য। এটা আমাদের জন্য অপমানজনক।’
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। সঞ্চালনা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নতুন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ স্কিমে দেশের ৪০০-এর বেশি স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তবে এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৈষম্য আখ্যা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এর আগে গত ২৬ মে সর্বজনীন এই পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও ২৮ মে দুই ঘণ্টা ক্লাস বর্জন করেন রাবি শিক্ষকেরা। পরে গত ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা।