নুরুল আফছার, স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম লাভজনক এই টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে, যা দেশের অর্থনীতি, রাজস্ব ব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “বিগত স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এনসিটি টার্মিনালের প্রতি কুনজর দিয়েছেন। তিনি দেশের একের পর এক লাভজনক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এই টার্মিনালকেও বিদেশি মালিকানায় দিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে ইতোমধ্যেই নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও তাদের লোকজন এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। তারা বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। এটি শুধু অর্থনীতির উপর নয়, দেশের সার্বভৌমত্বের উপরও আঘাত।”
এনসিটির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ হয় শুধুমাত্র এনসিটি টার্মিনালের মাধ্যমে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনসিটি থেকে সরকার আয় করেছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, এনসিটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিলে এর বিপরীত প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সরাসরি আঘাত হানবে। এনসিটিতে কর্মরত বন্দরের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন। বিদেশি কর্তৃপক্ষের অধীনে গেলে বর্তমানে অর্জিত বৈদেশিক আয়ের ৫০ শতাংশই বৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এনসিটিতে ব্যবহৃত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি হস্তান্তরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে বন্দরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে, শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। পাশাপাশি কর্মরত দক্ষ শ্রমিকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হবে এবং তাদের জীবনমান নিম্নমুখী হবে। অবসর জীবনের অনিশ্চয়তা এবং দারিদ্র্যতা বাড়বে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই, তাই এনসিটিতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো—এই টার্মিনালের সন্নিকটে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সামরিক ঘাঁটি, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, ডা. এ কে এম ফজলুল হক, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শফিউল আলম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবসহ আরও অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :