রাজশাহীতে চোর অপবাদে শ্লীলতাহানি ও মারধর করে বৃদ্ধার মাথার চুল কেটে দিয়েছে 


editor প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩, ২০২৪, ৭:৪৮ অপরাহ্ণ /
রাজশাহীতে চোর অপবাদে শ্লীলতাহানি ও মারধর করে বৃদ্ধার মাথার চুল কেটে দিয়েছে 

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে চোর অপবাদে মোছা. নাসিমা বেগম নামের ৫২ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে গ্রীলের সাথে বেঁধে শ্লীলতাহানি ও মারপিট শেষে মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় নগরীর সপুরার ছয়ঘাটি মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিন অসুস্থ অবস্থায় এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ৫জনসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে অভিযুক্ত করে আরএমপি বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মোছা. নাসিমা বেগম। পরে ভুক্তভোগী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে থানা পুলিশ ও স্বজনদের সহয়োগিতায় বৃদ্ধাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন সপুরা ছয়ঘাটি এলাকার মুক্তার হোসেনের মেয়ে সোনিয়া শারমিন ওরফে টুম্পা (৩১), স্ত্রী সেলিনা (৪৮), ছেলে সজীব (২৫) এবং একই এলাকার লালুর ছেলে এবাদত (৩২), আলামিনের মেয়ে আসরাফুন নেছা।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মোছা. নাসিমা বেগম বাজে কাজলা এলাকার কেফাত শেখের স্ত্রী। তিনি ওইদিন বেলা দেড়টায় সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে গেলে বৃদ্ধাকে চোর বলে আটক করে । এরপর পাশে একটি বাসার বেলকুনির গ্রীলের সাথে তাঁকে রশি দিয়ে হাত পা বেধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারপিট শুরু করে। মুক্তার হোসেনের স্ত্রী সেলিনা মাথা ধরে রাখে মেয়ে সোনিয়া শারমিন ও ছেলে সজীব কাঁচি দিয়ে তাঁর মাথার চুল কেটে ফেলে। তিনি কাটতে নিষেধ করলে লালুর ছেলে এবাদত লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে ছিলাফোলা কালশিরা জখম করে। কিছু কখন পর আরো কিছু লোকজন আসলে সজীব ও এবাদত শরীরের কাপড় চোপড় টানা হেঁচড়া করে ছিড়ে ফেলে শ্লীলতাহানি করে। পরে সেলিনা বৃদ্ধার ব্যাগের ভিতরে থাকা নগদ ১ হাজার ৫০০ টাকাসহ ব্যাগটি কৌশলে হাতিয়ে নেয়।

ঘটনাস্থলে থাকা হাদির মোড়ের ফরমান হোসেনের ছেলে আফজাল হোসেন (৩০) বলেন, ঘটনা কয়েকদিন আগের। এই বৃদ্ধার ছেলে রিকশা চালিয়ে ছয়ঘাটি এলাকায় আসেন। এ সময় ছেলেটির রিকশা নষ্ট হলে স্থানীয় মেকারের কাছে সারতে দেন। রিকশা সারতে দিয়ে এই সময়টিতে মক্তার হোসেনের বাসায় নাকি চুরি করার সময় ছেলেটি ধরা পড়ে। পরে রিকশাটি মেকারের গ্যারেজে থাকে তবে মুক্তার হোসেনের পরিবারের লোকজনের জিম্মায়। এই বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করলে থানা পুলিশ ছেলেটিকে গ্রেফতার করে । থানা পুলিশ রিকশা নিয়ে যাননি। এদিন ছেলের মা রিকশা নিতে আসেন। কিন্তু রিকশা না দিয়ে উল্টো মারধর, শ্লীলতাহানি ও মাথার চুল কেটে দেয়।

বৃদ্ধার সাথে আসা খরবোনা পঞ্চবটী এলাকার বাবুর ছেলে সোবহান(২৬) বলেন, বৃদ্ধা নাসিমা বেগম দরিদ্র মানুষ। তিনি রাজশাহীর মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেনসহ বিভিন্ন জায়গায় বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন তিনি বয়সের ভারে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করতে পারেননা। তিনি খুব কষ্টে অর্জিত টাকায় একটা রিকশা কিনেন। সেটি তাঁর ছেলেকে চালাতে দিয়েছিলেন। ছেলের খারাপ অভ্যাসের জন্য আজ রিকশা অন্যের দখলে। ছেলেটি চুরি করতে আসলেও তো অভিযুক্তদের বাসা থেকে কিছু নিতে পারেনি। এমনকি পুলিশেও ছেলেটির কাছে কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। রিকশা থেমে থাকলে বৃদ্ধার উপার্জন বন্ধ থাকে। ছেলে দোষ করেছে বলে আজ জেলে। কিন্তু বুড়ি তো কোন অপরাধ করেনি। তাহলে কেন বুড়িকে রিকশা না দিয়ে চুরির অপবাদে গ্রীলের সাথে হাত পা বেঁধেমারপিটসহ শ্লীলতাহনি করলো ? আর কেন মাথার চুল কাটলো?

ভুক্তভোগী নাসিমা বেগম বলেন, রিকশা নিতে পুলিশের সহযোগিতায় ওখানে যাই। পুলিশের সামনে আমাকে মারধর করেছে। পুলিশকেও খারাপ ভাষায় গালাগালি করেছে। আমি আমার রিকশা ফেরত চাই।

এদিকে মুক্তার হোসেনের মেয়ে সোনিয়া শারমিন বলেন, এটা মা ছেলের একটি চক্র। ছেলের নামে পূর্বে ৩টা মামলা আছে। এটা এদের ব্যবসা। মা আসে ফাঁকা বাসা বাড়ি খুঁজতে। খুঁজে পেলে তাঁর মাদকাসক্ত ছেলেকে তাঁর বন্ধুদের নিয়ে এসে সেই বাড়িতে চুরি ডাকাতি করায়। আমার পরিবারের ওপর চোর ছেলেটা ধরা পড়েও হামলা করেছিল। আমার পরিবারের সদস্যের ৬টা সেলাই পর্যন্ত লেগেছে।

বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি। মামলা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।