স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীতে এবার দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এসব কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন উন্নয়ন কাজ তরান্বিত করতে নাগরিকদের চলাচলে সাময়িক বিড়ম্বনা হলেও উন্নয়ন কাজ সম্পন্নের পর পাল্টে যাবে নগরীর চিত্র। রাজশাহীকে নিয়ে আরও গর্ববোধ করবেন নাগরিকরা।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, ২৯৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের সর্বমোট ২২৯টি প্যাকেজের মধ্যে ১৮৩টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪৬টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশের অধিক। বড় প্রকল্পের বাইরেও বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাসিক সূত্র জানায়, প্রায় ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর রাজশাহী মহানগরী দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবুজ, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশসম্মত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বিগত ৫ বছরে রাজশাহী মহানগরীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক চার থেকে ছয় লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী।
রাজশাহী মহানগরীর সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজশাহী নগরীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের নগরীর প্রশংসা করেন, শহরকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।
সূত্র জানায়, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে রাস্তা পারাপার ও দুর্ঘটনা রোধে নগরীর ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬টি নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে, যা শীঘ্রই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এছাড়া জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে রাজশাহী এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে। দেশের মানুষ শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে।
রাসিক জানায়, রাজশাহী মহানগরীর কেন্দ্র স্থলের বুক চিরে রেললাইন। রেলের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শীঘ্রই ট্রেন চলাচলের জন্য রেলের ডাবল লাইন হতে যাচ্ছে। চালু হতে যাচ্ছে ডাবল ডেকার ট্রেন। কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন নির্মিতব্য ইয়ার্ডে ভারত ও নেপাল থেকে আনা পণ্য সামগ্রী নামানো ও ওঠানো হবে। আরডিএ এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি এলাকা উত্তর দিকে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে চলাচল বাড়বে। রাজশাহী সিটির আয়তন তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। শহরের মধ্যে রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। আগামীতে মানুষ ও যানবাহন সংখ্যাধিক্যের কারণে শহরের উত্তর-দক্ষিণে চলাচল ক্রমবৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে যানজটসহ দুর্ঘটনাও বাড়বে। সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্ঘটনারোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের বাস্তবতায় রাজশাহী মহানগরীতে রেলক্রসিং-এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান মুহূর্তে ফ্লাইওভার তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে তা করা কঠিন হবে, নির্মাণ ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। আপাত দৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের ব্যবহার সীমিত মনে হলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প এবং এর বাইরের কার্যক্রমসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটির সভা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সভায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামোর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে ক্রসিং এ ওভারপাস, প্রশস্ত রাস্তা, ড্রেন, ফুটওভার ব্রিজ, কাঁচাবাজার মার্কেট নির্মাণসহ নগরীতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও নগরীকে নান্দনিকভাবে সাজাতে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। বড় প্রকল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। এসময় রাজশাহী নগরীর চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন রাসিক মেয়র।
আপনার মতামত লিখুন :