ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, তাপপ্রবাহ চলবে


editor প্রকাশের সময় : জুন ১১, ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ণ /
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, তাপপ্রবাহ চলবে

স্টাফ রিপোর্টার: তীব্র কিংবা মাঝারি নয়; রাজশাহীর প্রকৃতিতে বয়ে যাচ্ছে মৃদ্যু তাপপ্রবাহ। সংখ্যাগত চিত্রে মৃদ্যু হলেও মানুষের ঘাম ঝরছে তীব্র তাপদাহের আবহওয়ার চেয়েও বেশি! এর কারণটা হলো ভ্যাপসা গরম। ফ্যানের নিচে বসেও তাই মিলছে না স্বস্তি। তেঁতে ওঠা টিনের চাল কিংবা ছাদ সবখানেই ভ্যাপসা গরম গ্রাস করে ফেলছে। রাতে তাপমাত্রা কমলেও ভ্যাপসা গরমের কারণে রাত-দিনের ফারাকও খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে না। এতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষসহ শিশু, বৃদ্ধা ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে নগরী ঘুরে দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমে নাগরিকদের নাভিশ্বাস ছুটছে। শ্রমজীবীরা কাজ করতে বেরিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। নগর উন্নয়নকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের পুরো শরীর ভিজে গেছে ঘামে। দুপুরে নগরের হাইটেক পার্ক সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের পুরো শরীর ঘামে ভিজে ‘চপচপ’ করছে। দেখে মনে হতে পারে তারা গোসল দিয়েছেন! সেখানে সবার শরীর দিয়ে বৃষ্টি ফোঁটার মতো কিছু সময় পরপর ঘাম নুয়ে পড়ছিলো মাটিতে। তবে শুধু নির্মাণ শ্রমিকরাই নয়; গাড়ি চালকসহ যাত্রীদেরও ভ্যাপসা গরমে ভিজে যেতে দেখা গেছে।
ওই এলাকা দিয়েই অটোযোগে কাশিয়াডাঙ্গা আসছিলেন পবার বাসিন্দা চম্পা বেগম। তিনি বলেন, রোদ তেমন নেই। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে কোথাও গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি না। গাড়িতে উঠলে একটু বাতাস লাগে। আজ সেটিও উধাও হয়ে গেছে। এই গরমে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডগুলোতে দুপুরে ঘণ্টাখানেক অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে কোনো বেড ফাঁকা নেই। একটু পরপর ভর্তি রোগী আসছেন। যারা মেঝেতেই বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরমের কারণে রোগী বেশি। আর মানুষের গরমে ওয়ার্ডগুলোতে আরও বেশি গরম। কারণ ফ্যানের বাতাস তেমন একটা স্বস্তি আনতে পারছে না। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার সেই তাপমাত্রা কিছুটা কমে হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। কিন্তু তাপমাত্রার পারদ কম-বেশি যাহোক ভ্যাপসা গরমের প্রকোপ বেড়েছে বলেই মনে করছে মানুষ।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এএসএম গাউসুজ্জামান বলেন, বৃষ্টির বিষয় নিয়ে রাজশাহী থেকে মন্তব্য করতে নিষেধ আছে। তবে ভ্যাপসা গরমে রাজশাহীর মানুষ ভুগছেন।
উল্লেখ্য, তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাহলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র হয় ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে।
অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস আজ জানায়, গতকাল খুলনা বিভাগসহ গোপালগঞ্জ,রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ,পাবনা ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। চাপাইনবাবগঞ্জে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পূর্বাভাবে বলা হয়,আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। লঘুচাপের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।