স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মহানগরীতে গড়ে উঠছে সারি সারি বহুতল ভবন। বিভিন্ন পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না ইমারত বিধিমালা। অধিকাংশ ভবন নির্মাণে ঘটছে নকশা বিচ্যুতি। ভবনগুলোতে নিশ্চিত করা হচ্ছে না অগ্নিনির্বাপক অবকাঠামো। অভিযোগ উঠেছে চাহিদামতো টাকা দিলেই রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ভবনের নকশা মিলছে। তেমনি টাকা দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিরাপত্তার অনাপত্তিপত্র।
বহুতলগুলোর সামনে-পেছনে ছাড়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় জায়গা। ছোট গলি সড়কে ভবনের গায়ে গাদাগাদি করে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। বহুতল ভবন নির্মাণে পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে ইমারত বিধিমালা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব ভবনে বসবাস করছেন লোকজন। সম্প্রতি নগরীর কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণে গুরুতর অনিয়ম নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
নগরীর কাজিহাটা এলাকায় গড়ে ওঠা বহুতল গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলের ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল। ভবনের জায়গাটিকে আংশিক আবাসিক ও আংশিক মিশ্র জোন হিসাবে ব্যবহারের এনওসি দেওয়া হয়। সেই আলোকে ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরডিএর অথরাইজড শাখা থেকে নকশা অনুমোদন করা হয়। ভবন মালিকের নাম ইসফা খায়রুল হক শিমুল।
অনুমোদিত ভবনের নকশায় গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে বেজমেন্ট ছাড়া ১০ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। গ্র্যান্ড রিভারভিউ ভবনের নকশায় দেওয়া শর্তে বলা হয়, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ সব ইমারত বিধিমালা প্রযোজ্য হবে। এছাড়া ভবনটি নির্মাণকালে আরডিএর ইমারত পরিদর্শক আবুল কাশেম সময় সময় ভবন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করবেন এবং অগ্রগতি প্রতিবেদনের মাধ্যমে অথরাইজড অফিসারকে অবহিত করবেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ৩১ মে ফায়ার সার্ভিসের একটি সনদ নেওয়া হয়। অগ্নিনিরাপত্তা সনদে ভবনের ফ্লোর প্ল্যান অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট ও ফায়ার কমান্ড স্টেশন স্থাপন করার শর্তাবলী দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগে জানা গেছে, গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল ভবন নির্মাণে অনুসরণ করা হয়নি নকশা ও অগ্নিনিরাপত্তামূলক সনদের কোনো শর্তাবলী।
আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্র্যান্ড রিভারভিউ ভবনের বিষয়ে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা কোনো অভিযোগ পাননি। নকশাবহির্ভূত ভবন হয়েছে বলে যদি প্রমাণ হয় তা হলে নকশা বাতিল করা হবে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক একেএম মোর্শেদ লাকী বলেন, ফায়ার সার্ভিস দ্বিতীয়বার পৃথক কোনো সনদ দিতে পারবে না। ফায়ার সনদের শর্তাবলী লঙ্ঘিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু গ্র্যান্ড রিভারভিউ ভবনই নয় এরকম আরও অভিযোগ আছে বিভিন্ন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে। ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী কোনো ভবন র্নির্মাণের আগে অগ্নিপ্রতিরোধ নিরাপত্তা প্ল্যান ও ফায়ার সনদ ছাড়া রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে নকশা অনুমোদনের কোনো বিধান নেই। কিন্তু রাজশাহীতে এমন অনেক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে যেগুলোতে ফায়ার সনদ নেই। নেই অগ্নিপ্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা। এমনকি ভবনগুলো নির্মাণে অনুসরণ করা হয়নি ইমারত বিধিমালা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করেই ভবনের নকশা দেওয়া হয়। তবে আরডিএর জনবল কম। ফলে নির্মাণকালে সামগ্রিক তদারকি সম্ভব হয় না। এ সুযোগে অনেক মালিক ইচ্ছেমতো ভবন করে ফেলছেন। আমরা এ প্রবণতা রোধে কাজ করছি।
আপনার মতামত লিখুন :