মনির হোসেন, বেনাপোল : যশোরের শার্শা উপজেলা শুরু হয়েছে নতুন ইরি ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর ব্যস্ততা। উপজেলার বিস্তৃত ফসলের মাঠ জুড়ে সোনালী ধান কাটার যেন উৎসব চলছে। নতুন ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণী। সেই সাথে ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা দল বেধে ধান কাটছেন আর মনের সুখে গান গাইছেন। কেই ধানের আটি বাঁধছেন, কোথাও কোথাও ধান কেটে মাঠের মধ্যেই ‘বাদা’ দিয়ে রাখছেন। আবার বিভিন্ন যানবাহনে ও কৃষকরা কাঁধে করে ধান বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। ফসলের মাঠ থেকে বাড়ি সর্বত্র চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার মাহা উৎসব।
কৃষকরা জানান, এখন পুরোদমে ইরি ধান কাটা শুরু হয়েছে। কাঠ ফাঁটা রোদ উপেক্ষা করে সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা। কৃষকরা আরো জানান, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ১০-১২ দিনের মধ্যে ধান কাটা, মাড়া ও শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ সম্পন্ন হবে।
কৃষক ও দিনমজুরদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এবার এক বিঘা ধান কেটে ও আটি বেধে কৃষকের বাড়িতে আনতে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
৫ নং পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদ বারোপোতা গ্রামের কৃষক কওছার আলী জানান, বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকায়ও ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই নিজেরা ধান কাটতে শুরু করেছি। তিনি আরো জানান, তেল-সারসহ সব জিনিসের দাম বেশি তবে এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় কোনো রকমে আসলটা বাচবে।
দিন মজুররা জানান, এবছরে তাপমাত্রা প্রচন্ড বেশি তারপরও দিন মজুর সংকট সে কারণে মজুরি একটু বেশি। তারা আরো জানান, আমরা এবছর বিঘাপ্রতি কাটা বান্দা ৫ হাজার টাকা নিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান, শার্শা উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আবাদি জমি ২৩৩৯০হেক্টর, উৎপাদন ১লক্ষ্য ৫০হাজার ২১মেট্রিক টন। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ইরি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০বিঘা (২৩ হাজার ৪১১শ হেক্টর) জমিতে ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আরও ৩ হাজার ৫৫৫ বিঘা বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এবার উপজেলায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮০ বিঘা জমিতে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৩১ টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ধান কাটার শ্রমিক সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে দীপক কুমার সাহা বলেন, ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাজাত করার জন্য উপজেলায় ৮টা হারভেস্টারে কাজ চলছে। প্রতিটি হারভেস্টারে ঘণ্টায় তিন বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাজাত করা সম্ভব।
কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ থেকে ধান তোলায় ব্যস্ত এখানকার জমি মালিকরা। একই সঙ্গে সবাই ধান তোলা শুরু করায় উপজেলার সর্বত্র কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে।
তবে বাইরের শ্রমিকরা আসায় সেই অভাব অনেকটা পূরণ হচ্ছে বলে জানান দীপক।
বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে বলে কৃষকরা যে ফলন আশা করেছিল তার চাইতে বেশি ফলন পাচ্ছেন। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আগামী সোমবার থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সে কারণে উপজেলার সকল কৃষকদেরকে জমির ধান যদি ৮০ ভাগ পেকে থাকে তাহলে দেরি না করে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আহবান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :