অনলাইন ডেস্ক : পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঢাকায় আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আট আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে আসামিদের রিমান্ড শুনানি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী এই নির্দেশ দেন। এর আগে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।
আজ রাত পৌনে ৮টার দিকে মানিকগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আবুল খায়ের মিয়া মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার চান্দইর গ্রামের মো. আমজাদ খানের ছেলে ও সদর উপজেলা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. আল-আমিন খান তমাল (২২), সদর উপজেলার পাঞ্জনখাড়া গ্রামের মো. জালাল উদ্দিন আহমেদের ছেলে ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ পিয়াস (২২), সদর উপজেলার বড় ষাট্টা গ্রামের মৃত হায়াত আলীর ছেলে ও গড়পাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন (৬০), পৌরসভার পূর্ব দাশড়া এলাকার সুনীল ঘোষের ছেলে ও জেলা যুবলীগের কর্মী সঞ্জিব ঘোষ (৪০), উপজেলার অন্বয়পুর গ্রামের মো. বায়হান মল্লিকের ছেলে ও শিবালয় উপজেলার শিবালয় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন (৪৮), সদর উপজেলার পাঞ্জনখাড়া গ্রামের মৃত শাহীন খান সৃজনের ছেলে ও ছাত্রলীগের নেতা খান মো. রাফি সৃজন ওরফে রাফু (১৮), সদর উপজেলার দক্ষিণ উথলী গ্রামের মৃত মীর নাসির উদ্দিনের ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা মো. মীর মারুফ (২১) এবং একই গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা মীর আমিনুর (২৬)।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে সঞ্জিব ঘোষ ও মো. মোশারফ হোসেন বাদে বাকি আসামিদের বাড়ি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের গ্রামের বাড়ির এলাকার। সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের ঘোষের বাজারের পাশের এলাকায় মানিকগঞ্জের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি এম এস সিফাত কোরাইশী সুমনের বাড়ি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেনর বাড়ি, গড়পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিনের বাড়ি। স্থানীয় লোকজনের দাবি, আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের মদদেই চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোষের বাজার এলাকায় ভাস্কর্য শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে আগুনে একটি ঘরের ভেতরে থাকা সব আসবাবপত্র, ভাস্কর্যসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পয়লা বৈশাখের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও প্রচার করাসহ তাকে হুমকি দেওয়া হয়। বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মোটিফ বানানোর অভিযোগ তুলে ফেসবুকে এই অপ্রচার চালানো হয়। পরে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন মধ্যরাতেই তার বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ও তার পরিবারের দাবি, মানবেন্দ্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানাননি, তিনি আনন্দ শোভাযাত্রার বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন।
এ ঘটনায় বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ছাত্র চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্রের বাড়িতে আগুনের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আজাদ হোসেন খান বলেন, ওই এলাকায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইসরাফিল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী সুমনের বাড়ি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দোসররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যাতে বর্তমান সরকার ও বিএনপিকে দোষারোপ করা যায়। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্যই আওয়ামী দোসররা এই কাজ করেছে।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগী মানবেন্দ্র বাদী হয়ে একটি মামলার করেছেন। আগুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর হয়ে কাজ করছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার পর আজকে বিকেলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :