অনলাইন ডেস্ক : মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন কম্পিউটার সিমুলেশন বলছে, পূর্বাভাস অনুযায়ী হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে না আমাদের আকাশগঙ্গা মিল্কিওয়ে। বরং এর ধ্বংস এড়ানোর সম্ভাবনাও প্রায় অর্ধেক।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, তবে এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের কোনো গ্যালাকটিক সংঘর্ষ ঘটতে পারে আরও কয়েক বিলিয়ন বছর পর, যখন সূর্য তার আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণ নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
আকাশগঙ্গা ও তার চেয়েও বড় ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা প্রতি সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার গতিতে একে অপরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করে আসছেন, আগামী প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে এ দুটি ছায়াপথের সংঘর্ষ ঘটবে। আর তা হলে আমাদের সৌরজগতের জন্য সুখকর হবে না।
আগের গবেষণাগুলো বলেছিল, মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডা মিলে যে নতুন ছায়াপথ গঠিত হবে—যাকে কেউ কেউ ‘মিলকমিডা’ বলছেন—তার কেন্দ্রে সূর্য এবং পৃথিবী চলে গিয়ে বিশাল কৃষ্ণগহ্বরে তলিয়ে যেতে পারে। কিংবা সূর্য এমনকি আন্তঃগ্যালাকটিক শূন্যতাতেও নিক্ষিপ্ত হতে পারে।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, এ সম্ভাবনাগুলো হয়তো অতিরঞ্জিত।
প্রভাবশালী গবেষণা সাময়িকী ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার সংঘর্ষ আগামী ১০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ঘটার সম্ভাবনা কেবল ৫০ শতাংশ।
‘এটা একপ্রকার কয়েন ছোঁড়ার মতো,’বলছেন গবেষণার প্রধান লেখক, ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কির টিল সাওয়ালা।
তারা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে ১ লাখেরও বেশি কম্পিউটার সিমুলেশন চালান, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বশেষ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ উপাত্ত।
সাওয়ালা জানান, আগামী ৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে ছায়াপথদ্বয়ের সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং তারা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে। ধরা যাক ৫ লাখ আলোকবর্ষের কিছু কম। কিন্তু এরপর ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য পদার্থ যদি তাদের আরও কাছে টেনে না নেয়, তবে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটবে না।
সিমুলেশনের মাত্র অর্ধেক অংশেই দেখা গেছে, অদৃশ্য পদার্থের প্রভাবে গ্যালাকসিগুলো একে অপরকে জড়িয়ে ধ্বংসের পথে যেতে পারে। তবে তাও প্রায় ৮ বিলিয়ন বছর পরের ঘটনা—যখন সূর্য অনেক আগেই নিভে যাবে।
‘এখনও বলা যাচ্ছে না, আমাদের গ্যালাক্সি ধ্বংস হবে কি না,’ সাওয়ালা বলেন।
‘আকাশগঙ্গা ও অ্যান্ড্রোমিডা একে অপরকে ঘিরে ঘুরপাক খেয়ে হয়তো আরও কয়েক দশক বিলিয়ন বছর টিকে থাকতে পারে, আমরা জানি না।’
গবেষণা নিবন্ধটি সংক্ষেপে বলেছে, ‘আমাদের গ্যালাক্সির ভাগ্য এখনও পুরোপুরি অনিশ্চিত।’
গবেষকরা বলেন, তাদের ফলাফল মানে এই নয় যে আগের হিসাবগুলো ভুল ছিল। বরং তারা শুধু নতুন তথ্য ও আরও কিছু উপগ্রহ ছায়াপথের প্রভাব বিবেচনায় নিয়েছেন।
সাওয়ালার মতে, ইউরোপের সদ্য-অবসৃত গাইয়া মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও হাবল টেলিস্কোপ থেকে আগামী দশকে পাওয়া নতুন তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হতে পারে।
এত কিছুর বাস্তব জীবনে প্রভাব কেমন—তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিজ্ঞানীরা জানান, সূর্যের কারণে পৃথিবী আগামী এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই জীবের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
তবু, ভবিষ্যৎ নিয়ে মানবিক সংবেদনশীলতা থেকেই হয়তো ভাবনায় পড়ে যাই।
‘আমার হয়তো মিল্কিওয়ে ধ্বংস না হোক এমন একটা মানসিক আকাঙ্ক্ষা আছে,’ সাওয়ালা বলেন।
‘যদিও বাস্তবে তা আমার জীবন, এমনকি আমার সন্তান বা তাদের সন্তানদের জীবনেও কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
আপনার মতামত লিখুন :