গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা থেকে আসামির নাম বাদ দিতে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে অভিযোগ পাওয়ার পর রাতেই এসআই আবু জাফর মৃধাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান।
বুধবার তিনি বলেন, “ওরে আমরা সাসপেন্ড করছি। প্রাথমিক তদন্তে, প্রাথমিক সত্যতা পাইছি। এজন্য গতকাল রাতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসছি আমরা। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়ে, বিভাগীয় ব্যবস্থাটা হবে।”
ভুক্তভোগী ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১৬ মে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাজারে ছেলে রুবেল মোল্লাকে মারপিটের ঘটনায় আমেরিকা প্রবাসী মো. রাসেল হোসেইনকে প্রধান আসামি করে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গাড়িষাপাড়া এলাকার ইটভাটা ব্যবসায়ী ফরিদ মোল্লা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান গুরুদাসপুর থানার আবু জাফর মৃধা।
এরপর মামলা থেকে রাসেল হোসেইনের নাম বাদ দিতে এসআই আবু জাফর পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি এবং ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন বলে অভিযোগ করা হয়। ৩ জুন পুলিশ সুপারের কাছে সেই অভিযোগটিন করেন প্রবাসী রাসেল হোসেইনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম রাব্বি। তিনি অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের অডিও জমা দেন।
এসআই আবু জাফর ও গোলাম রাব্বির মধ্যে কথোপকথনের সেই অডিওটি সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমেও ছড়িয়েছে। তবে এটির সত্যতা নির্ণয় করা যায়নি।
সেই অডিওতে এসআই আবু জাফরকে বলতে শোনা যায় যে, প্রধান আসামির নাম মামলা থেকে বাদ দিতে হলে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে। পাঁচ লাখ টাকার কমে সেটি শেষ করা যাবে না। আপাতত যেন ঈদের আগে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।
রাশ আরবান স্টাইলের ম্যানেজার গোলাম রাব্বি বলেন, “এসআই আবু জাফর মিয়া দোকানে এসে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়, ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে। প্রথম অবস্থায় পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আমি এর সম্পূর্ণ প্রমাণ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি, আমার পরিবার, রাসেল ভাইয়ের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসেন এক ভিডিও বক্তব্যে বলেন, “এসআই আবু জাফর মৃধা ফোন দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। পাঁচ লাখ টাকা যদি আপনে দেন, তাহলে মামলা থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।”
নাটোর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী জনগণকে রক্ষার কাজে কাজ করবে এবং তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাতে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু আমরা যে ঘটনাটা জেনেছি, পুলিশ রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”
এ ব্যাপারে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।
অডিও কথোপকথনে ঘুষের সঙ্গে ওসি ও এসপির সংশ্লিষ্টতার কথাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর থানার ওসি আসমাউল হক বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও ক্লিপটা (আবু জাফর মৃধার ঘুষ দাবির কথোপকথন) আমরাও শুনেছি। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এটা এসপি স্যার জানেন, আপনি এসপি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।”
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “হ্যাঁ বলতেছে। যেডা হয়, তদন্তে বের হবে, সে কোন প্রেক্ষাপটে, কেন বলছে। আমি অভিযোগটা পাইছি দুপুরে। দুপুরে পাওয়ার কারণে আমি বাকিটা বলতে পারতেছি না। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত উত্তর দেওয়া মুশকিল। পূর্ণাঙ্গ তদন্তে তিন দিন সময় লাগবে, পরে বলতে পারব ইনশাআল্লাহ।”
আপনার মতামত লিখুন :