মনির হোসেন, বেনাপোল : সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্সকৃত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা না দেয়ায় লাইসেন্স বাতিলের আওতায় পড়া যশোরে ২৩ জনের আগ্নেয়াস্ত্র এখনও জমা পড়েনি। যে কারণে এখন তারা অবৈধ অস্ত্রধারী হিসেবে সরকারিভাবে পরিগনিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক। বাতিলকৃত আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সসমূহের বিষয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২০ মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। জমা না দেয়া অস্ত্রধারীদের মধ্যে রয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত ১০ সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী। অন্যান্য রয়েছেন ১০ জন।
সূত্রের দাবি, তথ্য বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লাইসেন্স প্রাপ্তদের সিংহভাগই ছিল আওয়ামী ঘরানার। এছাড়া লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্র মালিকদের অনেকে এখনও পলাতক রয়েছেন। এরমধ্যে পলাতক সাবেক এমপি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে তথ্য মিলেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট ৯ দিনের সময় বেধে দিয়ে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সকৃত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হলেও সব অস্ত্র জমা পড়েনি। প্রথম কয়েকদিন যশোরে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। প্রথম ৫ দিনে মাত্র ১০ শতাংশ অস্ত্র জমা পড়ে। তবে বেধে দেয়া সময় ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়লেও যশোর জেলায় ২৩ জন অস্ত্র জমা না দেয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আজাহারুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেয়া আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ব্যতিত) স্থগিত করা হয়। এছাড়া গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে জমা না করা লাইসেন্স বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসনের মুন্সিখানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যশোর থেকে লাইন্সে গ্রহন করেছিলেন অথচ নির্ধারিত সময়ে জমা করেননি এই তালিকায় রয়েছেন মেজর সৈয়দ গোলাম মোকাদ্দেস (অবঃ) প্রাক্তন অধিনায়ক ৮ম রাইফেল ব্যাটেলিয়ান যশোর, মেজর (অবঃ) আলী আকবর, মেজর (অবঃ) সাব্বির হাসান, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল মান্নান, শাহীন চাকলাদার, শেখ সাবুদ আলী, সিপাহি মিজানুর রহমান, নায়েক সিরাজুল ইসলাম, নায়েক কে এম নজরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল হালিম মুন্সি, ১০ ল্যাঃ কর্পোঃ, হাবিলদার (অবঃ) মহিউদ্দিন, সোলাইমান হোসেন, মুন্সি আব্দুস আরিফ, অবসরপ্রাপ্ত নায়েক আব্দুল হক, সার্জেন্ট কাজী আবুল কাশেম (অবঃ), হাবিলদার আব্দুল মান্নান (অবঃ), সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অবঃ) শরিফুল ইসলাম, জাহিদুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার ও মারুফুজ্জামান মারুফ।
যশোর জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, যশোর জেলায় ৮ উপজেলায় লাইসেন্সকৃত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৩৮। এরমধ্যে রিভলবার রয়েছে ১০টি, পিস্তল ৩০টি, শর্টগান ৯৮টি, রাইফেল ৩২টি, একনলা বন্দুক ১৮৮টি ও দোনালা বন্দুক ১৬৮টি। এসব নবায়নকৃত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২৩৩টি অস্ত্র রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু পুলিশের আর সব বেসরকারি ব্যক্তিদের নামে ছিল।
এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় এর সংখ্যা ৬৭৪টি। ২৬ আগস্ট থেকে জেলার ৯ থানাতে অস্ত্রগোলাবারুদ জমা নেয়া শুরু হয়।
কোতোয়ালি থানা সূত্রের তথ্যানুয়ায়ী, ৬৭৪টি বৈধ লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মধ্যে স্থগিত হওয়ার বেলিভাহ জমা পড়ে। সব থানায় বেশির ভাগ জমা পড়ে। তবে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইস্যু করা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বেশিরভাগই পেয়েছিলেন আওয়ামী ঘরানার নেতা কর্মী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে প্রায়ই ওই বৈধ এবয় গোপন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আওয়ামী ঘরানার অনেত অস্ত্রধারী। যে কারণে কাছে থাকা বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জোর দাবি ওঠে সাম্প্রতিক সময়ে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন অনেকেই। এসব বৈধ অস্ত্র নিয়েই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনও কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন।
যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম অফিস আদেশে জানিয়েছেন, অস্ত্র আইন, ১৮৭৮ এর ১৮ (ক) ধারা ও ১৯২৪ সালের অস্ত্র বিধিমালার ৪৩ বিধিতে অর্পিত ক্ষমতাবলে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা মতে ২৩ জনের লাইন্সে বাতিল করা হয়েছে। বাতিলকৃত আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সসমূহের বিষয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২০ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান জানিয়েছেন, বেশিরভাগ অস্ত্র জমা পড়েছে। যেগুলো জমা হয়নি আবার জেলা ম্যা্িজস্ট্রেট লাইসেন্স বাতিল করেছেন সে ব্যাপারে সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতিমধ্যে সাবেক এমপি শাহিন চাকলাদারে বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র দখলে রাখার দায়ে মামলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :