রামেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীরা সেবা পাচ্ছে বিশেষ ওয়ার্ডে


editor প্রকাশের সময় : জুলাই ৮, ২০২৪, ৯:১০ অপরাহ্ণ /
রামেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীরা সেবা পাচ্ছে বিশেষ ওয়ার্ডে

স্টাফ রিপোর্টার: হঠাৎই দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে আহত অজ্ঞাত রোগীদের চিকিৎসায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। কখনো ফায়ার সার্ভিস, কখনো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আবার কখনো জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষও এসব রোগীদের ভর্তি করে দিয়েই চলে যান। এরপর খোঁজ নেয়ার আর কেউ থাকে না। আহত অবস্থায় কাঁতরালেও পাশে এসে পরম মমতা নিয়ে দাঁড়ানোরও থাকে না কেউ।
চিকিৎসা প্রত্যেকটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলেও এতোদিন নানা অবহেলা ও বঞ্চনা নিয়ে এসব রোগীদের হাসপাতালের ওয়ার্ডের কোনো এক কোণায় পড়ে থাকতে দেখা যেতো। আবার মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীরা অন্য রোগীদের জন্য আক্রমণাত্মকও হয়ে যেতেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেন সবাই। এবার অজ্ঞাত এসব রোগীদের বিশেষ ওয়ার্ডে সেবার মানবিক দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে এসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে ক্যাথল্যাবের পাশে পরিত্যক্ত একটি জায়গাকে অজ্ঞাত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দুইটি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। তবে ৪-৫ জন রোগী অনায়াসে সেবা নিতে পারে এমন ব্যবস্থাপনাও আছে। পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে সুন্দর পরিবেশেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের বেডের চারপাশে পরিচ্ছন্ন পর্দা দিয়ে দেয়া হয়েছে।
অথচ অস্থায়ী এ ওয়ার্ডটি স্থাপন করার আগে মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের অনেক সময় উলঙ্গ অবস্থায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেতো। ডাক্তার, নার্সরা ও আয়ারা রোগী খুঁজতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেন। অনেক সময় চিকিৎসাও মিলতো না!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেবা সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে, অজ্ঞাত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য এই ওয়ার্ডটির প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আন্তরিকতার অভাবে তা এতোদিন আশ^াসেই সীমাবদ্ধ ছিলো, বাস্তবায়ন হয় নি। বর্তমান পরিচালক এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে গত তিন মাস আগে অস্থায়ী একটি ওয়ার্ড তৈরি করেছেন। একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে ব্যবস্থাপনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এটির ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হওয়া প্রয়োজন ।
বর্তমানে এই ওয়ার্ডে দু’জন রোগী ভর্তি আছেন। যার একজন পারুল। তার বয়স ১৮-২০ এরমধ্যে। মানসিকভাবে অসুস্থ এই কিশোরী দেড় বছরের অধিক সময় ধরে চিকিৎসা নিচেছন। এখনো নিজের নামটি বলতে পারেন না। শরীরে স্পষ্ট বড় বড় ক্ষতচিহ্ন।
এ হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীদের চিকিৎসায় সুপরিচিত নাম আলেয়া খাতুন। পদে তিনি আয়া হলেও অজ্ঞাত রোগীদের অভিভাবক হিসেবে হাসপাতালে তার পরিচিতি রয়েছে। হাসপাতালে অজ্ঞাত কোনো রোগী আসলে প্রথমেই ডাক পড়ে তার। তার কর্মকা- নিয়ে গণমাধ্যমেও বেশকিছু রির্পোট প্রকাশিত হয়েছে। তাকে এই ওয়ার্ডের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে।
আলেয়া খাতুন বলেন, অস্থায়ী এ ওয়ার্ড হওয়ার আগে অজ্ঞাত রোগীদের তিনবেলা গিয়ে দেখাশোনা করতাম। এ রোগীদেরকে অনেক সময়ই ডাক্তার ও নার্সরা ভয় পায়। একারণে আমি নার্সদের কথামতো যত্ন করি, ওষুধ খাওয়ায়, গোসল করায়। যখন ওয়ার্ড ছিলো না তখন এসব কাজ করতে গিয়ে আমার খুব বেগ পেতে হতো। একা মানুষ কষ্টও হতো। কারণ এসব রোগী সামলানো কঠিন। এখন পরিচালক আরও তিনজনকে আমার সঙ্গে দিয়েছেন। আমরা এখন শিফট অনুযায়ী কাজ করি।
আলেয়া বলেন, এখন দু’জন রোগী আছেন। এরমধ্যে পারুল সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আছে। ওর বাসা যাশোর। বাসায় তার বৃদ্ধ মা আছে। এছাড়া আর কেউ নেই। ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর পুঠিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি করেন। মাথায় এবং শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত অজ্ঞাত মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছিলো হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে যান। হাসপাতালের নিউরো সার্জারি (৮ নম্বর) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে পারুলের সেবা-শুশ্রুষা করার মতো কেউ ছিল না। পাশাপাশি মাথাসহ সারা শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল খাম-জখমে ভর্তি। এরমধ্যে একটি পা ও একটি হাত ছিল ভাঙা। ফলে নড়া-চড়াও করতে পারছিল না মেয়েটি। এখনও তাকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মায়ের মমতা দিয়েই আগলে রেখেছি।
রামেক হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সামাজসেবা অফিসার ড. হামিদুল ইসলাম বলেন, তারা হাসপাতাল পরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী অজ্ঞাত রোগীদের জন্য কাজ করেন। একটি ওয়ার্ড হওয়ায় রোগীদের সেবা ব্যবস্থাপনা সুন্দর হয়েছে। সমাজসেবা অফিস থেকে এসব রোগীদের ওষুধসহ অন্যান্য সহায়তাও দেয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে তাদের জন্য অস্থায়ী বেড করে দিয়েছি। একটি নীতিমালা তৈরি করে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি। সে অনুযায়ী সেবাও দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে গত তিন মাসে ৮ জন রোগীকে পরিবারে কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীতে একটি স্থায়ী ওয়ার্ড করার পরিকল্পনাও আমার আছে।