অনলাইন ডেস্ক : কোরাআন অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াত জেলার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা মাদিয়ানে এক স্থানীয় পর্যটককে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। হত্যার পর তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘটেছে এই ঘটনা। নিহত সেই পর্যটকের নাম মুহম্মদ ইসমাঈল (৩৬)। তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কয়েক জন মাদিয়ান পুলিশ স্টেশনে এসে অভিযোগ করেন— ইসমাঈল হোটেলে অবস্থানকালে কোরআন শরিফ পুড়িয়েছেন। এই অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ইসমাঈলকে হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসে হেফাজতে রাখে।
কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শতাধিক মানুষ জড়ো হন ওই পুলিশ স্টেশনে। তারা ওই স্টেশন ঘেরাও করে ইসমাঈলকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন। পুলিশ তাতে অস্বীকৃতি জানালে বিক্ষুব্ধ ওই জনতা থানায় আক্রমন করেন এবং হেফাজত থেকে ইসমাঈলকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বের করে এনে পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ইসমাঈলের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
সোয়াত পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাহিদ উল্লাহ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উত্তেজিত জনতা পুলিশ স্টেশন এবং পুলিশের গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে এই ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে।
তবে ভয়াবহ এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি।
খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রাদেশি পুলিশ প্রধানকে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বন্ধ করতে ১৮৬০ সালে ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি) আইন জারি করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত আইনটি বাতিল করলেও পাকিস্তান করেনি। বরং ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া উল হক দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আইনটিকে আরও শক্তিশালী করেন।
১৯৮৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্লাসফেমি আইনে পাকিস্তানজুড়ে অভিযুক্ত হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে পাঞ্জাবের খানেওয়াল শহরে এক ব্যক্তিকে এই অভিযোগে পাথর ছুড়ে হত্যা করেছিল উত্তেজিত জনতা।-সূত্র : আলজাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :