স্টাফ রিপোর্টার : দেশে এখন প্রতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদন হয়। এর প্রায় ৭০ শতাংশই উৎপাদন হয় রাজশাহী অঞ্চলে। আর রাজশাহীর আট জেলার মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই উৎপাদন হয় প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন। শুক্রবার (৩১ মে) সকালে নগরীর পার্টি পয়েন্ট কমিউনিটি সেন্টারে ‘পাটবীজ উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কলাকৌশল’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়ে চাষিদের ভাল বীজ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চুক্তিবদ্ধ ৮০ জন পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষিকে নিয়ে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিএডিসির পাটবীজ উৎপাদন জোন দিনব্যাপী এই চাষী প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ। উদ্বোধনী পর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষক মনিরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, আনারুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
চাষীরা বলেন, চাষাবাদে খরচ অত্যন্ত বেশি। তাই কৃষকের খুব সমস্যা। চুক্তিবদ্ধ চাষীদের কাছ থেকে পাটবীজ কেনার সময় বিএডিসি প্রতিকেজির জন্য ১৯৫ টাকা দিচ্ছে। এ টাকায় তাদের পোষাচ্ছে না। তারা পাটবীজের দাম অন্তত ২৫০ টাকা করার দাবি জানান। পাশাপাশি কোন কৃষকের ভাল ফলনের কারণে বাড়তি পাটবীজ উৎপাদন হলে সেটাও কিনে নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। চাষিরা বলেন, এটা খাবার নয় যে তারা খেয়ে ফেলবেন। তাই কম দাম হলেও বেচতে হয়। বাড়তি বীজ বাড়িতেও পড়ে থাকে। এতে তারা সমস্যায় পড়েন।
কর্মশালায় বিএডিসি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ‘দেশ টিকে আছে কৃষির ওপরে। করোনার ধাক্কা বোঝা যায়নি মজবুত কৃষির কারণে। ভাল বীজ হলে ফসল উৎপাদন এমনিতেই ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই চাষীদের ভাল বীজ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। ভাল বীজ হলেই ভাল ফসল পাওয়া যাবে। এক বছরের বীজ সে বছরেই ব্যবহার করতে হবে। পরের বছর পাটবীজ ছিটালে এর অঙ্কুরোদম ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে যায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে এখন ৬ হাজার মেট্রিক টন পাটবীজের চাহিদা। কিন্তু তারা চাষিদের দিতে পারেন বড়জোর এক হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও খরচ হয়। তাই তারা আমদানি থেকে সরে আসতে চাচ্ছেন। চাহিদার সবটুকুই দেশে উৎপাদন করতে চান তারা। এখন দেশে উৎপাদিত পাটবীজের ৭০ শতাংশই উৎপাদন হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলে। আউশ এবং বোরো ধানের মাঝে এখানে পাটবীজ হয়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি বলেন, এবার ‘সিড উইথআউট বর্ডার’ চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ২০০ মেট্রিক টন উন্নতমানের পাটবীজ আনা হবে। এরমধ্যে ৮০ টন দেওয়া হবে
রাজশাহী অঞ্চলে। পাশাপাশি বিজেআরআইয়ের ‘সবুজ সোনা’ নামের তোষা পাটবীজও দেওয়া হবে। এগুলো ভাল করে চাষ করে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করতে হবে। উন্নত বীজ দেশেই উৎপাদন করতে হবে।
বিএডিসির ব্যবস্থাপক (পাটবীজ) মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন- বিএডিসির ব্যবস্থাপক (বীজ) আবীর হোসেন ও যুগ্ম পরিচালক (পাটবীজ) শহীদুল্লাহ শেখ। কর্মশালায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা শামীম ইকবাল, বিএডিসির রাজশাহীর যুগ্ম পরিচালক (বীজ বিপণন) ফজলে রবসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :