অনলাইন ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানায় বরিশাল বিভাগের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। আবহাওয়া অফিস থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্লাবিত হতে পারে।
রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশালের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠির বিশখালী ২৬ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সুরা-মেঘনা নদীর পানি ৬৪ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনের মেঘনা ১ মিটার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলার তেঁতুলিয়া ১৪ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর ৩৫ সেন্টিমিটার, বরগুনার আমতলী উপজেলার বুড়িশ্বর নদীর পানি ৩৩ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৬৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বিশখালী ৭২ সেন্টিমিটার, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদী ৩৩ সেন্টিমিটার ও পিরোজপুরের কঁচা নদী ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি নেমে গেলে ভাঙন দেখা দেবে। আগামী দু-একদিন এভাবে পানি থাকতে পারে।
বরগুনার পশরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল সিকদার বলেন, আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ আগে থেকেই দুর্বল ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে বেড়িবাঁধ ভিজে নরম হয়ে যায়। পরে জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের এলাকায় পানি প্রবেশ করে।
ভোলার মনপুরা উপজেলার সাঁকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সেকান্দর হোসেন বলেন, মনপুরার প্রায় সব জায়গায় পানি উঠেছে। আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হলেও গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বিপদে আছি।
বিপৎসীমার ওপরে বরিশাল বিভাগের সব নদীর পানি, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, রাঙ্গাবালীতে এক ঘণ্টা টিকে থাকা দায়। প্রবল বাতাসে ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, এ ছাড়া পানি ঢুকে পড়েছে সবখানে। আমরা ভাসছি।
কলাপাড়ার খেপুপাড়া রাডার স্টেশন কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল জব্বার শরীফ বলেন, সন্ধ্যায় উপকূলে অগ্রভাগ আছড়ে পড়েছে। বুলেটিন অনুসারে ৪/৫ ঘণ্টায় উপকূল অতিক্রম করবে। পানির উচ্চতা ইতোমধ্যে বেড়েছে। বাতাসের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহমেদ বলেন, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পরপরই নদীর পাড় ও অনিরাপদ স্থানের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে উপকূল অতিক্রমে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় ৫ শতাধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। বিভিন্ন সংগঠনের ২০ হাজার লোক আপদকালীন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে। বিভাগে ৪ হাজার ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৬ হাজার ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। এ ছাড়া কুয়াকাটার সকল হোটেল ও পাকা স্থাপনা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এক লাখের মতো মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছে।
আপনার মতামত লিখুন :